অন্তঃসত্ত্বা ১১ বছরের শিশু!
বিশেষ সংবাদদাতা :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ৯:২৩ মিনিটচতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশু এখন ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শৈশবের গণ্ডি না পেরোতেই এই শিশু নিজের গর্ভে বড় করছে আরেক শিশুকে! সন্তান প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে তার।
বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে শৈশব রাঙানোর কথা ছিল তার। চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল।
কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্তা হয়ে পড়া শিশুটি আজ নির্বাক। বলা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে আরেক শিশুর জন্ম দেবে সে। ১১ বছর বয়সে মা হবে শিশুটি!
ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার জানায়, ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির দাদি বাদী হয়ে ১৮ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন জাহিদুল খাঁ (৫৫) নামের একজনের বিরুদ্ধে। তাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জাহিদুল খাঁ গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ী গ্রামের কালু খাঁর ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাড়িতে বসে শিশুটি জানায়, ঘটনার দিন শুক্রবার ছিল। দুপুরে গোসলের পর বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল সে।
বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে জাহিদুল পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যার হুমকিও দেন তাকে। ওই ঘটনায় সে দুই দিন ধরে অসুস্থ ছিল। ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়নি।
শিশুটির চাচি জানান, ঘটনার সাত মাস পর তার দৈহিক পরিবর্তন দেখা দেয়।
জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি সে। তবে পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে গর্ভে সন্তান থাকার কথা জানতে পারেন তারা। এরপর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করার পর চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শিশুর চাচা জানান, শিশুটির বাবা-মা দুজনেই পৃথকভাবে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন-পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গ্রাম্য সালিসে রফা করতে চেয়েছিলেন অভিযুক্ত জাহিদ; কিন্তু তা হয়নি। মামলা দায়ের হলেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় জানান, এমন দুঃখজনক ঘটনা গুরুদাসপুরে এটিই প্রথম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকায় সরকারিভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির গর্ভপাত ঘটানো হবে।
গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, আসামি পলাতক থাকায় তাকে এখানো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত আছে।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘শিশুর পেটে শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া মঙ্গলবার আবারও শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি।’