একজন অহংকারমুক্ত শুদ্ধ মনের মানুষ
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১:১৩ মিনিটবাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটকালে যে চার জাতীয় নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তারা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামান। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেভাবে তারা হাল ধরেছিলেন, তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তারা প্রবাসী সরকার পরিচালনা, মুক্তিবাহিনী সংগঠিত করা, তাদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ জোগাড় করা, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রায় এক কোটি উদ্বাস্তুর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা প্রভৃতি নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এ চার জাতীয় নেতা চিরকালই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত। এমনকি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরও তারা নেতার প্রতি অনুগত ছিলেন। ৩ নভেম্বর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রমাণ করে গেছেন তারা তাদের আদর্শ ও নীতি থেকে একচুলও বিচ্যুত হননি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এ নেতাদের জাতীয় নেতা বলা হলেও জেলহত্যা দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলোয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেসব অনুষ্ঠানে এ চার জাতীয় নেতাকে নিয়ে সেভাবে কোনো আলোচনা হয় না। ফলে দেশ ও জাতির জন্য তাদের নিঃস্বার্থ অবদানের কথা আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে না। উল্লেখ্য, একই ধারাবাহিকতায় গত ৩ নভেম্বর ৪৭তম জেলহত্যা দিবস পালিত হলো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে কোনো কিছু দিয়েই পরিমাপ করা যায় না। তাই বলে অন্যান্য জাতীয় নেতার অবদানের কথা অস্বীকার করি কী করে? তাহলে যে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটবে! বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম কোনো একক ঘটনার গল্প নয়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ পায় মুক্তিযুদ্ধে। এ ধারাবাহিক আন্দোলনে, শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ আরও অনেক জাতীয় নেতা আছেন, যাদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। তবে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙালি চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করে। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে এদেশে মাটি থেকে বিতাড়িত করে বিশ্ববাসীকে সেদিন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাঙালি যোদ্ধার জাতি। ৯ মাসের সেই সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করা এত সহজ ছিল না। নানারকম সীমাবদ্ধতার মধ্যে যে নেতারা তাদের প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বের গুণাবলিতে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিলেন, তাদের জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারই গঠিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামান সেদিন মুক্তিযুদ্ধকে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিচালনা করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। অথচ প্রবাসী সরকার গঠন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে গিয়ে সেদিন অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাদের। এ বাধাবিপত্তি নিজ দলের সদস্যদের কাছ থেকেও এসেছিল প্রবলভাবে।
প্রবাসী সরকারের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যার নাম স্মরণ করতে হয়, তিনি হলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন সেদিন। দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে অনেকেই মনে করতেন তিনিই বোধহয় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি। অনেক নেতাই তখন মুজিবনগর সরকারের সমালোচক ছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বহুদিনের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য তিনি পেয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অন্ধ অনুরাগী ছিলেন। মন ও মানসিকতার দিক থেকে তিনি অন্যান্য নেতার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। অন্য অনেকের মতো সংকীর্ণ মনোবৃত্তি কখনই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি কর্তব্যে ছিলেন অটল, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে বজ্রকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সেদিন তিনি জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার চরিত্রের এসব গুণে মুগ্ধ হয়েই দলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে অধীনস্ত বেশির ভাগ বেসামরিক কর্মচারী তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করেছিলেন।
তবে ভিন্ন মনোভাব ও ভিন্ন চিন্তার স্রোতোধারার মানুষ যে ছিল না তা নয়। প্রবাসী সরকার গঠনের প্রথম থেকেই তাজউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদের অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশতাক চরম অসন্তোষ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতি ভিন্ন মনোভাব প্রকাশ করে যে কোনো কাজেই তিনি বাধার সৃষ্টি করতেন। শুধু তাই নয়, প্রবাসী সরকারের অগোচরে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন। এছাড়া ‘মুজিবকে চাও, না স্বাধীনতা চাও? স্বাধীনতা চাইলে মুজিবকে হারাতে হবে। কোনটা চাও?’-এমন তত্ত্ব ছড়িয়ে দিয়ে দলীয় নেতা, কর্মী ও সংসদ-সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিলেন। খন্দকার মোশতাকের পাশাপাশি আরও অনেকেই প্রবাসী সরকারের অনেক পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। প্রভাবশালী কিছু যুবনেতা মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই নিজেদের প্রবাসী সরকারের কর্তৃত্বের বাইরে রেখেছিলেন।
১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে যখন কলকাতায় ফিরে আসেন, তখন গাজা পার্কের কাছে একটি বাড়িতে যুবনেতারা ছাড়া আরও অনেকের সঙ্গে এএইচএম কামারুজ্জামান ও এম মনসুর আলীও ছিলেন। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে পাশের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে যুবনেতারা বলেছিলেন, সরকার গঠনের প্রশ্নে পরিষদ সদস্যরা খুশি নন। সেদিন রাতেই লর্ড সিনহা রোডে পৃথক আরেকটি বৈঠক বসে। সেখানেও যুবনেতারা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শত্রুশিবিরে বন্দি, বাংলার যুবকরা বুকের তাজা রক্ত দিচ্ছে। এখন কোনো মন্ত্রিসভা গঠন করা চলবে না। এখন যুদ্ধের সময়। সবাইকে রণক্ষেত্রে যেতে হবে। রণক্ষেত্রেই গড়ে উঠবে আসল নেতৃত্ব। তারা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি বিপ্লবী কাউন্সিল গঠন করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সরকার গঠনে বেশি জোর দিয়েছিল। তারা সরকার গঠন ছাড়া সাহায্যের হাত বাড়াতে গেলে রাজনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে বলে জানিয়ে দেন। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত প্রবাসী সরকার গঠিত হলো। যুবনেতারা তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। যুবনেতারা এ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে গেলেন। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহযোগিতায় তারা মুক্তিবাহিনীর সমান্তরাল আরেকটি বাহিনী গঠন করে নাম দিলেন মুজিববাহিনী। যুবনেতাদের এমন ভিন্ন পথে হাঁটা প্রবাসী সরকারের জন্য কখনই সুখকর ছিল না। তাদের এমন আচরণ মুক্তিযুদ্ধের ময়দানেও প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাছাড়া বামপন্থি, ডানপন্থি সমস্যা তো ছিলই। এসব অযাচিত সমস্যা প্রবাসী সরকারকেই সামাল দিতে হয়েছে। তবে এসব কোনো কিছুই তাজউদ্দীন আহমদকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে একবিন্দুও বিচ্যুত করতে পারেনি। এত বাধাবিপত্তির পরও তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদের তখন একটাই চাওয়া ছিল-‘আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতাও চাই।’ শেষ পর্যন্ত নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সব বিভ্রান্তি দূর করে দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুও ফিরে এসেছিলেন।
তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে অত্যন্ত সফলভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাজউদ্দীন আহমদের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেসময় স্বাধীনতাকামী সামরিক-বেসামরিক সংগঠনগুলোকে বৃহত্তর জাতীয় কাঠামোয় সংগঠিত করেছিলেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের উপযোগী খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, পুনর্বাসন প্রভৃতি অঙ্গ সংগঠন তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য আদায় করে মুক্তিযুদ্ধে কাজে লাগানোর মতো দুরূহ ও জটিল কাজ সম্পাদন করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তিনি পারিবারিক জীবনযাপন করবেন না। প্রবাসী সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ও নেতা, যাদের পরিবার কলকাতা গিয়েছিল, তারা পরিবারের সঙ্গে বসবাস করলেও তাজউদ্দীন আহমদ পরিবারের সঙ্গে এক রাতও কাটাননি। তিনি বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা পরিবার ছেড়ে যদি যুদ্ধ করতে পারে, তাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি কেন পারবেন না। তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পাশের ছোট একটি কক্ষে থাকতেন। যুদ্ধকালে তার সম্বল ছিল একটিমাত্র শার্ট, যা তিনি অনেকদিন ব্যবহারের পর নিজ হাতে ধুয়ে ও শুকিয়ে ব্যবহার করতেন।
তিনি ছিলেন অহংকারমুক্ত ও শুদ্ধ হৃদয়ের মানুষ। তাজউদ্দীন আহমদ তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে তিল তিল করে গড়ে তোলা সুদৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অপ্রতিরোধ্য ও জটিল বাধা অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশ যে একদিন শত্রুমুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বদরবারে জায়গা করে নেবে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তিনি সে বিষয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। একাত্তরের ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি সেদিন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি অজেয় মনোবল ও সাহসের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন এবং প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙালি সন্তান রক্ত দিয়ে এ নতুন রাষ্ট্রকে লালিত-পালিত করছেন। দুনিয়ার কোনো জাতি এ নতুন শক্তিকে ধ্বংস করতে পারবে না। আজ হোক, কাল হোক, দুনিয়ার ছোট-বড় প্রতিটি রাষ্ট্রকেই গ্রহণ করতে হবে এ নতুন জাতিকে। স্থান দিতে হবে বিশ্ব রাষ্ট্রপুঞ্জে।’
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস প্রবাসী সরকার পরিচালনায় তিনি তার মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন। দুরূহ সেই সময়ে, অন্তর্ঘাতমূলক অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়ের মধ্যেও মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যরা দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তাজউদ্দীন আহমদকে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান ও অন্য নেতারা একাগ্র মন নিয়ে, নিজেদের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে পরিশ্রম করে গেছেন। স্বাধীনতার এ দীর্ঘ রেসের চূড়ান্ত পর্বে মুক্তিযুদ্ধকালীন জাতীয় নেতাদের এ অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধকালে সরকার পরিচালনায় তারা যে অবদান রেখে গেছেন, তাদের সেই নিঃস্বার্থ অবদান ও ভূমিকার কথা এ প্রজন্মের কতজন স্মরণ করে? আমরা কি তাদের সে সুযোগ করে দিয়েছি? মুক্তিযুদ্ধে চার নেতার সেই ভূমিকা, নিঃস্বার্থ অবদান ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে আমরা কি আমাদের সন্তানদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা দিতে পেরেছি? এখনো সময় আছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমাদের এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই হবে। যার যেখানে অবস্থান, তাকে সেভাবেই তুলে ধরতে হবে। যদি সঠিকভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা