বন্যায় সিলেট বিভাগে দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ
ভয়েস অব বিডি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০২২, ৬:২৫ মিনিটএবার বন্যায় সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোসহ দেশের ১৭ জেলার সড়ক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ৮৫ শতাংশই সিলেট বিভাগে।
বন্যার পানি নামার পর সড়কে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু সেতু ও কালভার্ট। সড়কের ভাঙা অংশ পার হতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার মানুষজনকে। প্রায় এক মাস পার হলেও এসব সড়ক এখনো সংস্কার হয়নি।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নটি দুর্গম ও সীমান্তবর্তী এলাকা। গত ১৬ জুন পাহাড় থেকে হঠাৎ নেমে আসা ঢলে এই এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ঘরবাড়ির পাশাপাশি সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লেংগুরা বাজার থেকে ফুলবাড়ী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক ফুট বিশাল গর্ত। প্রায় একই চিত্র সুনামগঞ্জ সদরের আবদুল জহুর সংযোগ সড়ক থেকে চালবন্দ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কেরও। পিচ উঠে গেছে, স্থানে স্থানে বড় গর্ত। সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রক্ষণাবেক্ষণ শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক হিসাবে বন্যাকবলিত ১৭ জেলায় ১ হাজার ৭৮৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন জেলার এলজিইডি কার্যালয় থেকে সদর দপ্তরে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পেয়েছে অধিদপ্তর।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সিলেটে
এবার স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয় সিলেট বিভাগে। এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্টের বড় অংশই সিলেট বিভাগের চার জেলা—সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এই চার জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৫২৬ কিলোমিটার সড়ক, যা এবারের বন্যায় সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মোট সড়কের ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি। সর্বোচ্চ ৬৪৭ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট জেলায়। সুনামগঞ্জ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৫৫ কিলোমিটার সড়ক।
এবার সুনামগঞ্জে তিন দফায় বন্যা হয়েছে। গত ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় দফার বন্যায় সুনামগঞ্জের সব উপজেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়ক বেহাল হয়ে পরেছে। ছাতক উপজেলার ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের হাসনাবাদ, কালারুকা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়কও ভেঙে গেছে।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূরে আলম বলেন, সব সড়কই ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। এবারের বন্যায় পানির উচ্চতা যেমন বেশি ছিল, তেমনি পানিতে স্রোতও ছিল বেশি। এ কারণে ক্ষতিও বেশি হয়েছে। এসব সড়ক দ্রুত সংস্কার করা না হলে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ২১৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ১২৪ কিলোমিটার, নেত্রকোনায় ৫৫ কিলোমিটার, জামালপুরে ৩৩ কিলোমিটার এবং শেরপুরে ৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়ক মেরামতের বিষয়ে এলজিইডির রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম মহসীন বলেন, বন্যাকবলিত জেলাগুলো থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তথ্য আসছে। তবে এটি ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব না। জেলা পর্যায় থেকে পাঠানো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে। এখন পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মেরামত ও পুনর্নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যায় একই সড়ক বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সরকারকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
বন্যাপ্রবণ এলাকায় সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে পানিনিষ্কাশনব্যবস্থাকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, পানিনিষ্কাশনকে গুরুত্ব না দেওয়ায় একদিকে বন্যায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বন্যার পানি দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে। সড়ক নির্মাণের সময় পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি।