ব্রিটেনের ‘বিগ লাঞ্চ’ পার্টিতে মাতোয়ারা কোটি মানুষ
বিডি ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৩, ১১:০৪ মিনিটব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত ভোজ উৎসব ‘বিগ লাঞ্চ’ পার্টিতে মেতে উঠেছিলেন দেশের দশ মিলিয়ন দেশপ্রেমিক জনতা। রোববার ব্রিটেনের বিভিন্ন রাজপথে আয়োজিত এ ভোজসভাকে ইতিহাসের বৃহত্তম ‘কমিউনিটি গেট-টুগেদার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটেনের লাখ লাখ জনতার এভাবে রাজ্যাভিষেক উদ্যাপন করায় তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানি ক্যামিলা। ডেইলি সান, ডেইলি মেইল।
বিগ লাঞ্চের অংশ হিসাবে ব্রিটেনের বিভিন্ন রাস্তায় আনুমানিক ৫০ হাজার লাঞ্চ স্ট্রিট পার্টির আয়োজন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। টেবিলে ইউনিয়ন জ্যাক সংবলিত নকশার আচ্ছাদন এবং লাখ লাখ কাগজের প্লেটের সমারোহ চোখে পড়েছে সর্বত্র।
এ আয়োজনে আপ্লুত রাজা এবং রানি রাজ পরিবারের ইনস্টাগ্রামের পাতায় দেশবাসীকে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। বার্তায় তারা বলেছেন, এটা আপনাদের প্রথম বিগ লাঞ্চই হোক বা বার্ষিক অনুষ্ঠানের অংশই হোক, আপনাদের প্রত্যেককে এতে অংশ নেওয়ার জন্য উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই সত্যিকারে অর্থে আনন্দের সঙ্গে এ আনন্দ উপভোগ করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশজুড়ে পশ্চিমাঞ্চলের কানাডা থেকে শুরু করে পূর্বে হংকং পর্যন্ত রাজার রাজ্যাভিষেক উদ্যাপনে বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের প্রবাসীরাও বিশেষ ভোজে অংশ নেন। ব্রিটেনের বার্ষিক ‘বিগ লাঞ্চ’ সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষ্যে এ বছর এ আয়োজন এগিয়ে আনা হয়েছে। এর আয়োজক শিক্ষামূলক দাতব্য সংস্থা ইডেন প্রজেক্টে মোট ৬৭ হাজারটি বিগ লাঞ্চ ইভেন্ট নিবন্ধন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজপরিবারের সদস্যসহ ব্রিটেনের প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ এ বর্ণাঢ্য আয়োজনে যোগ দেন।
এডিনবার্গের ডিউক এবং ডাচেস সুরির ক্র্যানলেতে, আর রাজকুমারী বিট্রিস ও ইউজেনি উইন্ডসরে রাজপরিবারের ভক্তদের সঙ্গে বিগ লাঞ্চের পার্টিতে অংশ নেন। প্রিন্সেস অ্যান এবং তার স্বামী ভাইস অ্যাডমিরাল টিম লরেন্সও মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাক ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি পরিবার এবং তরুণদের সঙ্গে রাজ্যাভিষেকের ভোজে যোগ দেন। সোমবার রাতে উইন্ডসর ক্যাসেলে অভিষেক কনসার্টের সূচনা হিসাবে ব্রিটেনের দশটির মধ্যে ছয়টি রাস্তাতেই পার্টির আয়োজন করা হয়। রোববার রাজ্যাভিষেকের আনুষ্ঠানিকতার সময় ব্রিটেনের বেশিরভাগ জনতা ঘরে বসে সেটি টেলিভিশনে প্রত্যক্ষ করেছেন। সোমবার তারা সেই আনন্দে শামিল হতে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে আসেন।
অভিযেক উৎসবে রাজা এবং রানির জন্য যে খাবারের মেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে সেই মেন্যুই সারা ব্রিটেনের উৎসবে খাবার হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ডিম-ভিত্তিক পালংশাক-লেসযুক্ত মেন্যুর রেসিপি তৈরি করেছেন রয়্যাল শেফ মার্ক ফ্লানাগান। তবে ভোজের আয়োজকরা এশিয়ার রেসিপি অনুযায়ী ভেড়ার মাংস এবং নিরামিষও রাজ্যাভিষেকের বিকল্প মেনু হিসাবে রেখেছেন।
১৯৫৩ সালে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের সময় বিশেষ ‘করোনেশন চিকেন’ বিদেশি অতিথিদের মাঝে পরিবেশন করা হয়েছিল। এতে ছিল কারি ক্রিম সস দেওয়া ঠান্ডা মুরগির মাংস। এর সঙ্গে ছিল চাল, মটরশুটি এবং মিশ্র সবজির স্যালাড।
বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছে খাবারের মেনু হিসাবে একে বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ হচ্ছে-এটি ভাগ করে অনেকের মাঝে পরিবেশন করা যায়, গরম বা ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করা যায়, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তালিকার সঙ্গে মানানসই এবং স্বাদ অনুসারে সহজেই মানিয়ে নেওয়া যায়।
তবে আরও জানা গেছে, মেনুতে রাজার প্রিয় কিছু খাবার যেমন পনির এবং ডিম রয়েছে। এছাড়া নানা স্বাদের এবং বর্ণের কেকের মাধ্যমে এবারের বিগ লাঞ্চ উপভোগ করেন।
ব্রিটেনে সরকারিভাবে রাজ্যাভিষেক উদ্যাপনের অংশ হিসাবে এবার এ বিগ লাঞ্চের মধ্যাহ্নভোজ এবং রাস্তায় পার্টির আয়োজন করা হয়। এমন হাজার হাজার অনুষ্ঠান সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত। এতে যে কেউকে আসতে পারেন। দেশের সবাইকে এতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে বিগ লাঞ্চ উপলক্ষ্যে রাস্তায় এক মিলিয়নেরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে রানি ক্যামিলা দাতব্য সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
গত বছর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্লাটিনামজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১৭ হাজারটিরও বেশি বিগ লাঞ্চ পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ অংশ নিয়েছিল এবং তাতে মোট দাতব্য সংস্থার জন্য ২২ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল।
রাজ্যাভিষেকের বিগ লাঞ্চের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লিন্ডসে ব্রুমিট বলেছেন, যুক্তরাজ্য জুড়ে বিভিন্ন গ্রাম, নগর এবং শহরে হাজার হাজার বিগ লাঞ্চের আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রাতৃত্বের চেতনা এখনো বেশ ভালোভাবে বহাল রয়েছে।