পুলিশের আরও ৪ ইউনিট পাচ্ছে তদন্তের ক্ষমতা
বিশেষ সংবাদদাতা :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৩:৪৩ মিনিটমানি লন্ডরিং মামলা তদন্তের ক্ষমতা পাচ্ছে পুলিশের আরও চারটি ইউনিট। এগুলো হচ্ছে-র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ও ডিএমপির কাউন্টার টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বতর্মানে এ ধরনের মামলার তদন্ত করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। মানি লন্ডারিংয়ের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটকে এ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিদেশে টাকা পাচার করা যেমন অপরাধ, তেমনি অবৈধভাবে দেশের ভেতরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা হস্তান্তর বা রূপান্তর করাও মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ। সম্প্রতি দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি এক শ্রেণির নাগরিক বিদেশেও টাকা পাচার বাড়িয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাড়ছে এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও। তাই পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও যেন এসব মামলার তদন্ত করতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন।
পিবিআই সূত্র জানায়, সম্প্রতি বেশকিছু চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। এসবের কয়েকটি ঘটনায় বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি মানি লন্ডারিং আইনে পড়ায় ওইসব মামলার তদন্তে বিপাকে পড়তে হয়েছে পিবিআইকে।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ও পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তের জন্য পিবিআইতে বিশেষ প্রশিক্ষিত লোকবল রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অত্যাধুনিক ফরেনসিক ল্যাব। সম্প্রতি মানি লন্ডারিং বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি পিবিআইয়ের নজরে আসে। এ কারণে এই মামলার তদন্তভার চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আশা করছি অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি শিগগিরই এ মামলার তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিবিআই অনেক সময় আদালতের নির্দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত মামলার তদন্তভার পায়। এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয় থাকলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এখন এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তের ক্ষমতা পেলে এ প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।
সূত্রমতে, নতুন প্রস্তাব পাশ হলে মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে জঙ্গি অর্থায়ন সন্দেহের ঘটনা তদন্ত চালাবে এটিইউ ও সিটিটিসি। এ বিষয়ে এটিইউ এর ডিআইজি মনিরুজ্জামান বলেন, অনেক সময় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য গ্রেফতারের পর দেশি-বিদেশি অর্থ বিনিয়োগের কানেকশন পাওয়া যায়। এ ধরনের কয়েকটি মামলা আমাদের হাতে আছে। কিন্তু তদন্ত ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। তাই এ বিষয়ে ক্ষমতা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশনা পাওয়া গেলে জঙ্গিদের আর্থিকভাবে পঙ্গু করা সম্ভব হবে। তারা মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে না।
র্যাব সূত্র জানায়, তারা অনেক বড় বড় আভিযান চালায়। কখনো কখনো যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করে ওইসব ঘটনার মামলার তদন্তও করে। কিন্তু এতে মানি লন্ডারিং আইনের অধীন কোনো বিষয় এসে গেলে সেখানে তাদের থমকে যেতে হয়। এ কারণে তারা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তের ক্ষমতা চায়।
র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বেশ কয়েকজন রাঘববোয়ালকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব ক্যাসিনোসংক্রান্ত যেসব অভিযান চালিয়েছে সেগুলোর সবকটির তদন্ত কার্যক্রম চালাতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত ক্ষমতা র্যাবের কাছে না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, হুন্ডিকাণ্ডে সরকার প্রায় আট দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হারায়। টাকাগুলো লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এ ঘটনায় সাড়ে ৫ হাজার এজেন্ট নম্বর শনাক্ত হয়। এসব নাম্বারে ১ লাখ ৮১ হাজার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে বলে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে উঠে আসে। এমন পরিস্থিতিতে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ধরতে মাঠে নামে সিআইডি। পুলিশের এই ইউনিট সম্প্রতি ১৬ হুন্ডি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে।
জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ায় প্রায় দুই বছর আগে আমি পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। এতে বাগড়া দেন সিআইডির সাবেক এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এতদিন তার কারণেই বিষয় ঝুলে ছিল। এখন প্রস্তাবটি পাশ হলে জঙ্গিসংক্রান্ত মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তে গতি আসবে বলে তিনি জানান।