এক ব্যতিক্রমী মুহতামিমের গল্প
ফরহাদ আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২২, ১২:২৩ মিনিটসিলেট বিভাগের বড় এক মাদরাসা। বার্ষিক ব্যয় প্রায় আড়াই কোটি। ছাত্রসংখ্যা প্রায় ১২০০। কেবল ছাত্রাবাসেই থাকে সাড়ে আটশো। হাইআহ আর এদারায় প্রতি বছর নজরকাড়া রেজাল্ট করে এর ছাত্ররা। মাদ্রাসায় বিল্ডিং এর অভাব নেই। একাডেমিক ভবন থেকে আবাসিক ভবন সম্পূর্ণ আলাদা। মুহতামিম সাহেব এই মাদরাসার হর্তাকর্তা। শিক্ষক স্টাফ এবং শূরা আমেলা সবাই থাকে সমীহ করেন। সর্বক্ষেত্রে তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
তাহলে চিন্তা করুন, এই মুহতামিম সাহেব কী পরিমাণ সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন? তাঁর বেতন ভাতা তো কমপক্ষে ত্রিশ হাজার হওয়ার কথা! তাঁর থাকার রুমটা তো বিলাসবহুল হবেই।
তাঁর তো অবশ্যই আলাদা একটি অফিস থাকবে।
মাদরাসার অফিসে তাঁর আলাদা একটি শাহী মসনদ কি থাকবে না? অবশ্যই থাকবে।
কী? এমনটাই তো ভাবছেন?
আপনি ভুল ভাবছেন। তাঁর কোনো ভিআইপি রুম নেই। রুমে একটা এসিও নেই, দামি কোনো কার্পেটও নেই। প্রতি বছর বন্যায় সবার আগে তাঁর রুমে পানি উঠে। রুমের পাশেই নতুন একটি দুতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিলো। ওখানে তাঁর জন্য সুন্দর একটি রুম বানানো হয়েছিলো। সাথে এটাস্ট বাথরুমও ছিলো। কিন্তু তিনি ওই রুমে যান নি, মাদরাসার শায়খুল হাদীস সাহেবকে ওই রুম দিয়ে দিয়েছেন।
তাঁর আলাদা কোনো অফিস নেই। মাদরাসার অফিসে এসে সারাদিন বসে থাকেন। এখানে তাঁর আলাদা কোনো আসনও নেই, এমনকি আলাদা কোনো ডেস্কও নেই। বসে থাকেন একজন সাধারণ শিক্ষকের মতো।
প্রায় ষাট বছর ধরে এই মাদরাসার শিক্ষক। শূন্য থেকে মাদরাসাকে এই পর্যায়ে এনেছেন। ষাট বছর পর তাঁর বেতন দাড়িয়েছে সাকুল্যে বিশ হাজার।
দু’ বছর আগে মাদরাসার ইংল্যান্ডস্থ আবনা-ফুযালা সংস্থার দায়িত্বশীলরা মজলিসে শূরায় প্রস্তাব করেছিলেন হুজুরের বেতন দ্বিগুণ করতে। শূরার প্রত্যেক সদস্য সানন্দে এই প্রস্তাব কবুল করেছিলেন। কিন্তু বাদ সাধলেন তিনি। বাকি শিক্ষকদের বেতন কম থাকবে আর তাঁর বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাবে, তিনি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। অবশেষে শূরা কমিটি অনেক অনুরোধ করে বেতন তিন হাজার বাড়িয়েছিলো।
অনেক সময় বিভিন্ন মিটিং ও প্রোগ্রামে যেতে হয়। একাই যান। কাউকে সাথে নেন না। অনেক হিতাকাঙ্খী অনুরোধ করেছেন- হুজুর এই বয়সে একা চলাফেরা করা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সাথে একজন খাদেম বা ছাত্র নিলে ভালো হতো। তিনি বলেছেন আমার সুবিধার জন্য আরেক ছাত্রের লেখাপড়ার ক্ষতি করবো কেনো?
তিনি এখন জীবন সায়াহ্নে আছেন। বয়স প্রায় ৮৫।বার্ধক্য ভর করেছে তাঁর ক্লান্ত শরীরে। এখন তাঁর বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
বাড়িতে তাঁর বিলাসবহুল ঘর আছে। রুমে এসিও আছে। কিন্তু তিনি বাড়ি যান না। রোদবৃষ্টিতে পড়ে থাকেন মাদরাসার জরাজীর্ণ এক রুমে। সাধারণ শিক্ষকের মতো বোর্ডিংয়ে আলু আর ডাল খেয়ে দিনাতিপাত করেন।
কার কথা বলছি- এতক্ষণে নিশ্চয় ঠাহর করতে পেরেছেন। এই মহান ব্যক্তিত্ব হলেন আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দীন দা.বা.। জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মুহতামিম। আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশের সভাপতি। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশেরও সভাপতি। বারাকাল্লাহু ফী হায়াতিহ।